Saturday, May 19, 2012

Need Vs Necessity

প্রচন্ড গরম! সবাই চারপাশে হাঁসফাঁস করছে! ট্রেন-বাস-অটোএ প্রত্যেকটা মানুষ একটু মন জুড়িয়ে দেওয়া ঠান্ডা হাওয়ার জন্যে হাপিত্যেস করে বসে আছে| অথচ কোথায় সেই শীতল সমীরন? কোথায় গেল ঈশান-কোণ অন্ধকার করা কালবৈশাখীর ঘন করাল মেঘ?

আমার অফিস-বাড়ি যাতায়াতে ট্রেন একটা অপরিহার্য অঙ্গ| সকালের ট্রেনে সফরটাকে যদিও বা তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ বলা যায়| বা সেটা বললেই শুনতে ঠিক লাগে| আর ফেরার পথে যাদবপুর - বালিগঞ্জ এবং বালিগঞ্জ - দমদম (বজবজ-নৈহাটি) এ এক ভারী আরামদায়ক ক্ষণ| উঠেই সোজা গিয়ে দরজার পাশে দাঁড়াই যাতে পুরো রাস্তাটা ফুরফুরে হাওয়া খেতে খেতে এবং গান শুনতে শুনতে যাওয়া যায়| এই দমবদ্ধ করা গরমে এ এক স্বস্তি|

আগের সপ্তাহেও এমনই ট্রেনে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম| ট্রেন স্যার গুরুদাস হল্ট স্টেশন-এ দাঁড়াতেই হুড়োপাটি করে লোকজনের নামা-ওঠা হল| এজ মধ্যবয়সী মহিলা (daily passenger) উঠেই মধ্যিখানের রড ধরে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে পড়লেন| মনে হল, শরীর খুব অসুস্থ| কিন্ত জানি উনি পরের স্টেশন, বিধাননগর-এই নেমে যাবেন এর পরের বনগাঁ লোকাল ধরবেন বলে, তাই ওনাকে ভিতরে ঢুকে বসার কথা বললাম না| ওনার বাকি সহযাত্রীদের আলাপ আলোচনা থেকে জানতে পারলাম - ওনার বাড়িতে পাখা নেই| মানে electricity connection নেই| ওনার High Blood Pressure, তাই এই গরমে সারা রাত ঘুম হয়না| উনি কলকাতায়  এক বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন| থাকেন বারাসত-এর ও অনেক স্টেশন পর| হঠাত্ দেখলাম উনি নীরবে কাঁদছেন| শরীর বেশি খারাপ হলে যদি কাজে আসতে না পারেন তাহলে যে একদিনের মাইনে কাটা যাবে ওনার!

সত্যি, মানুষের জীবন-সুখ-দুঃখ সব কত আপেক্ষিক! আমরা যারা  Corporate বা IT world-এ কর্মরত তারা এই দু'তিন ঘন্টার ট্রেনে-বাসে journey-তে বা বাড়িতে দু'ঘন্টা power cut হলে CESC-কে গালমন্দ করে থাকি! এটাই কী সেই চিরন্তন NEED vs NECESSITY-র লড়াই???


Sunday, May 13, 2012

তুমি না থাকলে সকালটা এত মিষ্টি হতনা...

আজ বিশ্ব মাতৃদিবস| ফেসবুকে মাতৃ-বন্দনা দেখে আমিও ভাবলাম কিছু লিখি, দু-চার লাইন মা-এর ব্যাপারে| কিন্তু ঠিক করে উঠতে পারলামনা যে ঠিক কী লিখলে আমি বোঝাতে পারবো যে মা আমার কাছে কী! তার এতো বছরের এতো প্রয়াস - আমায় বড় করে তোলা; শুধু বড় নয়, আমায় মানুষের মতন মানুষ করে তোলা; আমার সকল উত্পাত সহ্য করে আমায় বিনা কোনো শর্তে ভালোবাসা; আমার সকল খামখেয়ালিপনাকে সাপোর্ট করা; এসব কিছুকে কী করে আমি দু লাইন-এ প্রকাশ করি??? আমার এহেন স্বীয় ভাবপ্রকাশের অপদার্থতা ক্ষমার যোগ্য আশা করি|

বাঙ্গালীদের একটি অদ্ভূত সামাজিক আচার আছে যা আমার কাছে সম্পূর্ণ অর্থহীন| কনে বিদায়| আরও অন্যান্য আচার-এর মত এও ভারি অদ্ভূত এক আচার! যার মস্তিস্কপ্রসূত এই আচার তার মাথাটা নিয়ে গবেষণা করার ইচ্ছে আমার দীর্ঘদিনের| শুধু এক মুঠো চাল পিছন দিকে ছুঁড়ে দিয়ে কীভাবে বাবা মায়ের ঋণ শোধ করা যায়ে এ আমায় ভারি ভাবায়| আমার মতে, বাবা মায়ের ঋণশোধ করার এরকম প্রচেষ্টা বড্ড হীন, বড্ড দীন| যার কাছে আমার কোটি টাকার ঋণ, তাকে এক টাকা ঠেকানোটা নেহাতই মূর্খামো! সামাজিক বিয়ের প্রতি আমার তীব্র অসন্তোষের এটাই বোধহয় অন্যতম প্রধান কারণ (যদিও আরও এক গুচ্ছ কারণ আছে এটা ছাড়া, কিন্তু এটাই প্রধান)|

আমার স্বাধীন ভাবে বড় হয়ে ওঠার আসল কান্ডারী মা| যেখানে আমি দেখি আসেপাশে অধিকাংশ শিশুদের ওপর একপ্রকার চাপিয়ে দেওয়া হয় সব মতামত, আমি খুব ছোটবেলা থেকেই নিজের মতামত প্রকাশ করার স্বাধীনতা পেয়ে এসেছি| আমাকে কখনও বলে দেওয়া হয়নি কী নিয়ে পড়তে হবে, কী নিয়ে পড়া যাবেনা ইত্যাদি| মা বলে, "এটা তোমার জীবন, এই জীবন তোমাকেই কাটাতে হবে| তাই এই জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ডিসিশনগুলো নেওয়ার দায়িত্ব-ও তোমারই| শুধু এটা মনে রেখো যে তোমার নেওয়া ডিসিশন যেন তোমার জীবনে কোনো বিপদ না ডেকে আনে|" ছোটবেলা ভারী মজা হত যে "বাহ! কী আনন্দ, কেউ আমার হয়ে ডিসিশন নেবেনা|" কিন্তু আজ মনে হয় মা খুব সূক্ষ্মভাবে আমাকেই কর্ণার করেছে| স্বাধীনতার সাথে যে কত responsibility আসে সে আমি হাড়ে হাড়ে বুঝেছি| If I take a wrong decision, I will only have myself to blame and no one else. আর ঠিক যে মুহুর্তে এই ভাবনাটা মাথায় আসবে, you'll think twice before you step ahead.

মা শিখিয়েছিল যে যদি আমি নিজে নিজের কাছে ঠিক থাকি, তাহলে বাকি কে কি বলল সেটা নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই| তাই আজও কোনো বিষয়ে অসন্তোষ থাকলে আমার চারপাশের মানুষজন নীরবতা পালন করলেও, আমি আমার ভাব প্রকাশ করতে দু'বারও ভাবিনা! অনেকে বলে "অতি সাহস", অনেকে বলে "বড্ড বাড়াবাড়ি", আর অনেকে বলে আমি নাকি "আজন্ম বিদ্রোহী"...হি হি হি!!! আমি কিন্তু কিছু মনে করিনা, কারণ আমি জানি কোথাও এ গোটা পৃথিবীতে at least একজন মানুষ আছে যে আমায় বোঝে, আমায় support করে| আমার আর কারুর support-এর সত্যিই দরকার হয়না তারপর|

ঠিক এই কারণেই আমি নাস্তিক, ভগবান মানিনা বা মানার প্রয়োজন পড়েনা| আমি বিশ্বাস করি নিজে ঠিক থাকলে কোনো ভগবানকেও ভয় পাওয়া বা মানার দরকার পড়েনা| আর মায়ের থেকে বড় ভগবান হতে পারেনা| সেই যে একটা লাইন আছেনা, "A mother is a mother still, the holiest thing alive." :-)

আমার একা লড়ে যাওয়ার সাহসটাও তাই মায়ের থেকেই শেখা| যাইহোক, এই শেখার লিস্টটা বোধহয় শুরু করলে আর শেষ হবেনা| তাই আজকের মত এখানেই শেষ করলাম আমার মাতৃ-বন্দনা|

সত্যি, তুমি না থাকলে...